ফ্যাশন আজ আমাদের বিশ্ব সম্পর্কে কী বলছে?
বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নারীদের প্রধান পোশাক হচ্ছে শাড়ী এবং সালোয়ার কামিজ, ফ্যাশন সচেতনতার কারণে পরিবর্তন এসেছে পোশাকে
By Rumi Islam
ফ্যাশন একটি ল্যাটিন শব্দ। Facere থেকে এই শব্দের আগমন যার অর্থ হলো তৈরী করা, উপযোগী করা, চল, রেওয়াজ, কায়দা ইত্যাদি। আমরা তখনই এটাকে ফ্যাশন বলি যখন বিজ্ঞানসম্মতভাবে অনেকগুলো দল বা মানুষের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে তার গ্রহণযোগ্যতা টিকিয়ে থাকে। পোশাকের মাধমে মানুষ তার চরিত্র, ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতির প্রকাশ ও রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। একই ভাবে কোন জাতি বা গোষ্ঠীর পরিচয়, সংস্কৃতি এবং রুচি সম্বন্ধে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়।
⚠️ Watch our coronavirus awareness video
▲ Moslema in style. Photograph: Firdaus Latif
কোন জায়গায় কি পোশাক পড়তে হবে, অথবা কোন সংস্কৃতিতে কি রং ব্যবহার করতে হবে, এসবকিছুই ফ্যাশনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। পোশাক মূলত একটি শিল্প। এ পোশাকের মাধ্যমে একটি মানুষ হয়ে উঠতে পারে রুচিশীল ও আর্কষনীয়। তবে ফ্যাশনের সংজ্ঞা আজ আর ব্যক্তিত্ব ও রুচির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর ব্যাপ্তি এখন বিশ্বব্যাপী। কারণ, এই ফ্যাশনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে ফ্যাশন ইন্ড্রাষ্ট্রির সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে, ছেলে-মেয়ে উভয়ের ফ্যাশন সচেতন হয়ে ওঠার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে বিশ্বায়ন।
আমরা যদি ইউরোপের ফ্যাশনের কথা বলি, ইউরোপে ১১০০-১২০০ খৃষ্টাব্দে ফ্যাশনগুলো সহজ এবং পূর্ববর্তী শতাব্দীর পোশাক থেকে কিছুটা ভিন্ন ছিল। নারীরা দীর্ঘ টিউনিক ও গাউন পড়তেন। বিভিন্ন কারুকাজ করা লম্বা স্কার্ট মূলত উচ্চবিত্ত মহিলাদের কাছে ছিল জনপ্রিয়। পাশাপাশি পুরুষরাও দামি কাপড়ের ওপর কারুকাজ করা লম্বাজাতীয় পোশাককেই প্রাধান্য দিত বেশি। ১৭০০-১৭৫০ শতাব্দীতে ইউরোপ ও ইউরোপের প্রভাবশালী দেশগুলোতে পুরুষ ও মহিলাদের পোশাকগুলো আরো প্রশস্ত আকারে ডিজাইন করা হতো। এবং বলা হয়ে থাকে, ১৬৮০ থেকে শুরু করে ৯০এর শতক পর্যন্ত এই ধরনের পোশাক পুরো ফ্যাশন জগতেই আধ্যিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল।
২০১৭ সালের হিসেবে ফ্যাশন জগতের উদ্ভাবন ও উন্নয়ন মূলত ইউরোপ ও আমেরিকাতেই ঘটেছিল, তবে এখন তা ইউরোপ ও আমেরিকাতে সীমাবদ্ধ নয়, এর ব্যাপিত এখন বিশ্বব্যাপী। এক দেশে পোশাকের ডিজাইন, অন্য দেশে তৈরী এবং ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্ববাজারে। এভাবেই ফ্যাশন ইন্ড্রাষ্ট্রি এখন সফলতা অর্জন করে চলেছে। ফ্যাশন সাধারণত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামিাজিক, প্রযুক্তি, সিনেমা, সেলিব্রেটিসহ বিভিন্ন কারণের দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রভাবিত ও পরিবর্তন হয়।
বাংলাদেশও ফ্যাশনের জগতে এখন আর পিছিয়ে নেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন এসেছে পোশাকে। অনেক ডিজাইনার ব্যক্তিগতভাবে দেশে ফ্যাশন হাউজ খুলেছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন পোশাক ডিজাইন করে চলেছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নারীদের প্রধান পোশাক হচ্ছে শাড়ী এবং সালোয়ার কামিজ কিন্তু বর্তমানে ফ্যাশন সচেতনতার কারণে পরিবর্তন এসেছে পোশাকে। যেমন- কুর্তি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, আবায়া, স্কার্ফসহ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের ফ্যাশন জগতে বিবি রাসেলের নাম অত্যন্ত সুপরিচিত। তিনি দেশীয় পণ্য ব্যবহার করে ভিন্ন ভাবে ডিজাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শাড়ী ও লুঙ্গিকে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন পুরো বিশ্বব্যাপী। নতুন নতুন ফ্যাশন ডিজাইনারের সাথে সাথে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক ফ্যাশন হাউস ও বুটিক হাউস। এরা সবাই পাশ্চাত্যের ফ্যাশন এর ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে দেশীয় পোশাকের নতুন মাত্রা তৈরী করেছেন। সুতরাং আমরা এটা বলতে পারি দৈনন্দিন জীবনে অন্য কিছুর পাশাপাশি ফ্যাশনের চাহিদা কোন অংশেই কম নয়। তাই পোশাক পরার ক্ষেত্রে ফ্যাশন সচেতনতনা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফ্যাশনের সাথে যোগসুত্র রেখেই পোশাক নির্বাচন করার মাধ্যমে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন আর্কষনীয় ও রুচিসম্মত একজন মানুষ।